নেপালে বেড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ৩০ জন পর্যটক। কেউ গিয়েছেন বেড়াতে, আবার কেউ গিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের মশাগ্রাম এলাকার এক ব্যক্তির সঙ্গে জামালপুর, মন্তেশ্বর, মেমারি, সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০ জন পর্যটক বেড়াতে যান গত সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখে। বর্ধমান থেকে ট্রেন ধরে নেপাল পৌঁছানোর পর নেপালের কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে পোখরা এলাকায় একটি হোটেলে রয়েছেন তারা। এমনটাই জানা গেছে।
গত দুদিন ধরে উত্তপ্ত গোটা নেপাল। জনরোষে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নেপালে। সেই দেশের সমস্ত সরকারি দপ্তরে ভাংচুর চালানোর পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি পুলিশ ও মন্ত্রীরাও ছাড় পাননি। তাদের মারধর করার পাশাপাশি তাদের বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। এই পরিস্থিতিতে নেপাল জুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। গোটা দেশের দখল নিয়েছে সে দেশের সেনা জওয়ানরা।
এরই মধ্যে সেখানে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েছেন প্রায় ৩০ জন পর্যটক। ইন্টারনেট পরিষেবা সহ সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ থাকায়। গত দুদিন ধরে পরিবারের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ হয়নি। আগামী শনিবার ওই ৩০ জনের পর্যটকের দলটির ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু নেপালে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে আটকে রয়েছেন তারা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তারা জানিয়েছিলেন তারা একটি হোটেলে আটকে রয়েছেন দলের সকলেই। বর্ধমান থেকে নেপালের কাঠমান্ডু পৌঁছে সেখানে তিনদিন তারা ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ৭ টা নাগাদ কাঠমান্ডু থেকে পোখরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সমস্যা শুরু হয় তারপরেই।
তারা জানিয়েছেন, যে বাসে করে তারা পোখরা যাচ্ছিলেন, সেটি মাঝপথে আটকে বাস চালকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জোর করে উঠে পড়ে তিনজন। ঘন্টা দুয়েক বাস চলার পর একটি জায়গায় নেমে যায় তারা। ফের এক বাইক আরোহী তাদের বাসের সামনে এসে বাস আটকে দাঁড়ায়। সেই বাইক আরোহী বাস চালককে তার পেছন পেছন যেতে বলে। কিন্তু বাস চালক সুযোগ বুঝে অন্য রাস্তায় বাস ঢুকিয়ে দেয়। প্রায় রাত বারোটা নাগাদ তারা হোটেলে পৌঁছায়। তখন থেকে তারা হোটেলে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন। মেমারির বাসিন্দা নারায়ণ প্রামানিক ও রুপা প্রামানিক জানিয়েছেন, তাদের হোটেল থেকে কয়েকটা হোটেল পরেই দুটি হোটেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই হোটেলের মালিকরা নাকি প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক ছিল। তাদের দলে অনেক ছোট বাচ্চারা রয়েছে।
কিভাবে তারা বাড়ি ফিরবে সেই নিয়েই চিন্তায় রয়েছে এখন। জানা গিয়েছে মেমারি থেকে চারজন, বর্ধমান থেকে প্রায় ছয় জন, জামালপুর থেকে সাত জন, এছাড়াও হুগলি থেকে ৬ জন এবং ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকে কয়েকজন মিলে ৩০ জনের একটি দল আটকে রয়েছে। জানা গিয়েছে, বুধবার হোটেলের বাইরে রাস্তায় সেনা কর্মীদের টহলদারি করতে দেখে খানিকটা নিশ্চিন্ত হন তারা। পর্যটন সংস্থার মালিক সাগর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এর আগেও অনেকবার তিনি নেপালে এসেছেন। কিন্তু এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন কোনো দিন হতে হয়নি তাকে বা তার সাথে আশা পর্যটকদের। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখন নিরাপদে তারা যাতে বাড়ি ফিরতে পারে, সেই আর্জি তাদের।