নিত্যনতুন উপায়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলছে সাইবার প্রতারকেরা। ভিন্ন ভিন্ন পন্থা। কৌশলও ভিন্ন। তবে সব ক্ষেত্রেই মূল ‘অস্ত্র’ একই— জনতার দুর্বলতা।
গত এক বছরে প্রচুর লোককে ঘায়েল করেছে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’। রাজ্যে রাজ্যে ঘুম উড়েছে সাইবার পুলিশের। তবে সাইবার জালিয়াতদের হাতে রয়েছে আরও অনেক অস্ত্র। যা নিয়ে সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তন পুলিশকর্তা এবং রাজ্য পুলিশের সাইবার শাখার সঙ্গে কথা বলেছে আনন্দবাজার অনলাইন। উঠে এসেছে এমন বেশ কিছু অপরাধের কথা, যা নিয়ে ডিজিটাল গ্রেফতারের মতো আলোচনা হয়নি।
এক সময় ‘জামতাড়া গ্যাং’ নিয়ে বহু আলোচনা হত। এতটাই যে, নেটফ্লিক্সে ‘জামতাড়া’ বলে একটি ওয়েব সিরিজ়ও জনপ্রিয় হয়েছিল। মানুষকে ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে সিদ্ধহস্ত ছিল সেই গ্যাং। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে প্রতারণার কৌশল। জামতাড়া গ্যাং বা সমসাময়িক প্রতারক দলগুলি এখনকার সাইবার অপরাধীদের মতো এতটা ‘সংগঠিত’ ছিল না। শিকার বাছাইয়ে জোর দেওয়া হত না। যাকে তারা নাগালে পেত, তাকেই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করত। এখন সাইবার প্রতারণার চক্র শিকারকে টোপ গেলানোর আগে রেকি করে। জামতাড়ার তুলনায় এরা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, মানুষের তিন ধরনের দুর্বলতার সুযোগ নেয় আধুনিক সাইবার প্রতারকেরা— ভয়, লোভ এবং কখনও কখনও নির্বুদ্ধিতা। যাঁরা সাইবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তাঁরা এই তিন দুর্বলতার কোনও না কোনও একটির জন্যই ফাঁদে পড়ছেন।
অস্ত্র যখন নির্বুদ্ধিতা
ফাঁদ ১: রাজ্যের এক সরকারি আমলার সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট নকল করে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিল প্রতারকেরা। সেখান থেকে তারা ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠায় সাধারণ মানুষকে। পাঠানো হয় মেসেজও। বলা হয়, ওই আমলার পরিচিত এক আধাসেনা জওয়ান অন্যত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন। আসবাবপত্র বিক্রি করতে চান যৎসামান্য দামে। চাওয়া হয় মোবাইল নম্বর। সেই ‘ভুয়ো’ আধাসেনা জওয়ান হোয়াটস্অ্যাপে যোগাযোগ করে জলের দরে আসবাব কিনতে ইচ্ছুকদের। কিনতে রাজি হয়ে গেলে ফেলা হয় টোপ। জিনিসপত্র বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গাড়িভাড়া বাবদে টাকাও পাঠাতে বলা হয়। বিষয়টি নজরে আসতেই ওই আমলা সমাজমাধ্যমেই সকলকে সতর্ক করেন।
ফাঁদ ২: বিভিন্ন বেকারি সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির নামে প্রতারণার ফাঁদ ঘুরছে অনলাইনে। বছর খানেক আগে এমনই একটি চক্রের সন্ধান পায় কলকাতা পুলিশ। কেক, পেস্ট্রি এবং মুখরোচক খাবার বিক্রির এক নামী সংস্থার নামে খোলা হয়েছিল ভুয়ো ওয়েবসাইট। সেখান থেকে চলত ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি দেওয়ার নামে প্রতারণা। নয়াদিল্লির লাগোয়া নয়ডাতেও এমন একটি চক্রের সন্ধান মেলে কয়েক বছর আগে। একটি সুপার মার্কেট সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি দেওয়ার নামে প্রতারণা করা হচ্ছিল।
ফাঁদ ৩: পুরীর হোটেল বুক করতে গিয়ে প্রচুর মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন হোটেলের নামে ভুয়ো ওয়েবসাইট খুলেছে সাইবার প্রতারকেরা। ওই ওয়েবসাইট থেকে বুকিং করলেই টাকা চলে যায় প্রতারকদের কাছে। শুধু পুরী নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয় পর্যটনস্থলকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। এই চক্র এখনও সক্রিয়। সম্প্রতি প্রয়াগরাজে পূর্ণকুম্ভ শুরুর আগেও বেশ কিছু ভুয়ো ওয়েবসাইট খোলা হয়।
ফাঁদ ৪: বেকারত্বের সুযোগ নিচ্ছে প্রতারকেরা। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের চাকরির টোপ দেওয়া হচ্ছে। যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে, রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পাঠাতে হবে। বিশ্বাস করে সেই টাকা পাঠিয়ে দিলেই তা চলে যাচ্ছে প্রতারকদের পকেটে।