ফের ট্রেন দূর্ঘটনার জেরে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রেনের যাত্রীরা। শনিবার অল্পের জন্য রেল দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল যাত্রীরা। কোনও রকমে বড়সড় দুর্ঘটনা এড়াল নিউ জলপাইগুড়ি-চেন্নাই এক্সপ্রেস। জানা গিয়েছে, উড়িষ্যার সাবিরা হল্টের কাছে ইঞ্জিনের ব্যাটারি, মটর সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ খুলে যায়। উড়িষ্যার বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনার ক্ষত এখনও তাজা। তারপরেও ট্রেন দুর্ঘটনার খবর আসে একের পর এক। এবার বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলো নিউ জলপাইগুড়ি-চেন্নাই এক্সপ্রেস। শনিবার দুপুরে ট্রেনটি যখন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চেন্নাইয়ের দিকে যাচ্ছিল, সেই সময় উড়িষ্যার একটি স্টেশনে আপলাইনে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ইঞ্জিনের ব্যাটারি খুলে যাওয়ার কারণেই এই বিপত্তি।
তাই ঘণ্টা দুয়েক ধরে আপলাইনে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেনটি। রেল সূত্রে খবর, লোকো ইঞ্জিনে ব্যাটারি লাগাতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। মেরামতের পরই ট্রেন আবার রওনা দেবে। এদিকে দক্ষিণ পূর্ব রেল সূত্রে খবর, এদিন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চেন্নাই যাওয়ার পথে বালাসোর লাগোয়া সোরো এবং মারকোনার মাঝে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রেনের লোকো পাইলট বিষয়টি বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেন। তবে গাড়ির গতি যথেষ্ট ছিল বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে খবর। বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত বলে রেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে রেলের আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। মনে করা হচ্ছে, যেভাবে ইঞ্জিনের নীচের একাংশ খুলে গিয়েছিল তাতে লাইনচ্যুত হয়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। ২০২২-এর জানুয়ারিতে ময়নাগুড়িতে এভাবেই লাইনচ্যুত হয় বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ১২টি কামরা। মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজনের। এদিকে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনে ফাটল দেখা যায়। হঠাৎ বিকট শব্দ শোনা যায় শুক্রবার। ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় ট্রেন। হতাহতের কোনও খবর নেই।
বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। রেল সূত্রে খবর, বেলমুড়ি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় লাইনে ফাটল দেখা যায়। ১২৫০৯ আপ ব্যাঙ্গালোর গুয়াহাটি এক্সপ্রেস হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইন দিয়ে যাওয়ার সময় বেলমুড়ি রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় একটি বিকট শব্দ হয়। তারপরেই ট্রেনটি ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। গেট ম্যান গিয়ে দেখেন লাইনে ফাটল রয়েছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনে খবর দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রেলকর্মীরা পৌঁছে ফাটল মেরামতি কাজ শুরু করেন। এক ঘণ্টা পর এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুনরায় গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়।
কাঁকসার বাঁশকোপার বাসিন্দা পান্না লাল ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি তার পরিবারের সাথে ও গ্রামের কয়েকজনের সাথে দুর্গাপুর থেকে সকাল ৭টা নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি চেন্নাই এক্সপ্রেস ধরেন। খড়গপুর পার করে দ্রুত গতিতে উড়িষ্যা ঢোকার পরেই ট্রেনটি হটাৎ দাঁড়িয়ে পরে। ভয়ে সকল যাত্রীরা ট্রেন থেকে নিচে নেমে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে পরে। এর পরে যাত্রীরা জানতে পারে ইঞ্জিন থেকে মটর, ব্যাটারি সহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ খুলে গিয়েছে। অগত্যা তাদের ট্রেনের বাইরেই সময় কাটাতে হয়। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ধরে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলেও রেলের কোনো আধিকারিক তাদের কোনো সহযোগিতা করেন নি। না কোনো জলের না খাবারের ব্যবস্থা তারা করে। প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ মেরামতের কাজ শুরু হয় এবং রাত ৮টা নাগাদ ট্রেন ফের চলতে শুরু করে। তার কথায় ও অন্যান্য যাত্রীদের কথায় এই ভাবে রেলের দূর্ঘটনা ঘটলে মানুষ নিশ্চিন্তে কিভাবে যাত্রা করবে। রেলের একের পর এক দূর্ঘটনা রেলের গাফিলতির বিষয় প্রকাশ পাচ্ছে। যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়ে রেল দফতর কিছুই ভাবছে না।