যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘিরে ধরে তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার ঘটনায় দায়ের হয়েছে ৭ এফআইআর। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ এখনো পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের মধ্যেই গুন্ডামির অভিযোগ উঠলেও তারা পাল্টা শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সোমবার রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। শনিবারের গুন্ডামির ঘটনার তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে মহাম্মদ সাহিল আলি। সে যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তনী। আদতে বীরভূমের মহম্মদবাজারের বাসিন্দা। বর্তমানে একটি কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত। শনিবার গভীর রাতে বিজয়গড়ের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয় সাহিলকে।
অশান্তির সঙ্গে আর কারা জড়িত, ধৃতকে জেরা করে জানার চেষ্টা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে আহত হন ইন্দ্রানুজ রায় নামে যাদবপুরের এক ছাত্র। তাঁর সঙ্গে আহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের পড়ুয়া তথা এসএফআই নেতা অভিনব বসু। জানা গিয়েছে, অভিনব বসু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ইউনিটের এসএফআই সম্পাদক। আবার এসএফআই-এর কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য হলেও, কিন্তু তাঁর বাবা তৃণমূল সমর্থক। হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তাঁর বাবা অমৃত বসু। এলাকায় প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। ছেলের ওই কাণ্ডে ক্ষুব্ধ বাবা। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানান, ছেলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে যে ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তার নিন্দাও করেছেন অমৃত। প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরী হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাম এবং তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের তুমুল ধস্তাধস্তি হয়। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় তাঁর গাড়ি।
ভেঙে দেওয়া গাড়ির ‘লুকিং গ্লাস’ও। ঘটনায় আহত হন ব্রাত্য বসু। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তিনি চলে যান এসএসকেএম হাসপাতালে। শনিবার বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধুন্ধুমার ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। মন্ত্রীর গাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে দুই বাম ছাত্র আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। এঁদের একজনের উপর দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর গাড়ি চলে গেছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানানো হলো জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের তরফে। পাশাপাশি সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে যে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে, তাকে সমর্থনও করা হয়েছে এই চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের যুগ্ম আহ্বায়ক হীরালাল কোণার এবং পুণ্যব্রত গুণের তরফে রবিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, জন্মলগ্ন থেকেই জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্যাম্পাস গণতন্ত্রের পক্ষে। আমরা জানি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত পাঁচ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্রপ্রেমী ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছেন বহুদিন ধরে। অন্যদিকে, যাদবপুর কাণ্ডে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে হেনস্থার ঘটনায় এবার ক্ষিপ্ত সুর রাজ্যের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের গলায়। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর তিনি বললেন, গুন্ডাবাজি, বিজেপি শাসিত রাজ্যে করতে পারত, যোগীর রাজ্যে করলে হাড়গোড় ভেঙে দিত। কেন গাড়ি আটকাতে গেল, কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল? রাস্তায় ধাক্কা মেরে দাঁড় করিয়ে বলবে আমার সঙ্গে কথা বলুন, এটা কোনও গণতান্ত্রিক উপায়? গাড়ির সামনে দৌড়তে দৌড়তে পড়ে গেল, মনে হয় গাড়ির কোনও বাম্পার চোখে লেগেছে। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর গাড়ির নিচে পৃষ্ঠ হয়ে ছাত্ররা আহত হয়েছে বলে সিপিএমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও তার পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। কুনাল ঘোষ বিস্ফোরক এক ট্যুইটে লিখেছেন গাড়ির তলায় চাপা পড়েও কোনো ফ্র্যাকচার হয়নি, এমনটাই বলেছে এক্স রে রিপোর্ট। তিনি আরো বলেছেন বিপ্লবীরা পোস্ট টি আরেকবার রিপোস্ট করুক। মিথ্যাচারের নাটক কতদিন চলবে, গাড়ির কাঁচ ভাঙা, পতাকা খুলে নেওয়া গাড়ির উপরে ওঠা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। এছাড়াও ব্রাত্য বসু গতকাল বলেছিলেন, শাসক দলকে পছন্দ নাই হতে পারে তার বিরোধিতা করতে শারীরিক হেনস্থা কোনোভাবেই মানা যাবে না। তার সঙ্গে কুনাল যোগ করেছেন এটা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার বলে এত বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হচ্ছে।