চারচাকা বিলাসবহুল গাড়ির যুগে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে গরুর গাড়িতেই নববধূকে নিয়ে ফিরলেন নবদম্পতি। এমনই নজির গড়লেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের গোবিন্দপুরের বর জীবনন্দ দে ও কনে নিবেদিতা মাঝি। তাঁদের এই অভিনব সিদ্ধান্তে মুগ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজকের দিনে বিয়ের বরযাত্রী বা কনেযাত্রার জন্য রঙিন ফুল ও লাইটে সাজানো দামি গাড়ির বহরই যেন স্বাভাবিক দৃশ্য। কোথাও পালকিতে চড়ে বর-কনের আগমন, কোথাও আবার রাজকীয় শান-শওকত বজায় রাখতে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু গরুর গাড়িতে বউ নিয়ে ফেরার ঘটনা আজকের দিনে একেবারেই বিরল।
পুরনো রীতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই সিদ্ধান্ত— জানিয়েছেন বর জীবনন্দ দে। তিনি বলেন, “আমাদের শৈশবের গল্পে দাদু-ঠাকুরমার মুখে শুনেছি, একসময় গরুর গাড়িতেই কনে আনা-নেওয়া হতো। এখন যুগ বদলেছে, কিন্তু আমাদের শিকড় তো গ্রামেই! তাই ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে আমরা গরুর গাড়িতেই বাড়ি ফিরেছি।” নববধূ নিবেদিতা মাঝিও এই সিদ্ধান্তে খুশি। তাঁর কথায়, “এটা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এমন কিছু করতে পেরে খুব ভালো লাগছে, যা আমাদের পুরনো ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত”।
গ্রামের পথ দিয়ে গরুর গাড়িতে নববধূকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে উৎসাহী হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছোট-বড় সকলেই সেই বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হতে রাস্তায় ভিড় জমান। মোবাইল ফোনে ভিডিও-বন্দি করা হয় সেই বিশেষ মুহূর্ত।
এখন গ্রামবাংলায় লাঙল-জোয়ালের বদলে ট্রাক্টর, ধান ঝাড়ার যন্ত্রের দাপট। গরুর গাড়ির ব্যবহার প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবুও দেবানন্দ-নিবেদিতার এই বিশেষ উদ্যোগ প্রমাণ করল— প্রকৃত ঐতিহ্য কখনও হারিয়ে যায় না, শুধু নতুন রূপে ফিরে আসে।