বাকি ছিল কেবলমাত্র পত্রপাঠ ঘোষণা। তাও সম্পন্ন হল এবার। মোদী সরকার পাকাপাকিভাবে জানিয়ে দিল, বকেয়া তিন কিস্তি মহার্ঘ ভাতা পাবেন না ৪৯ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং ৬০ লক্ষের কাছাকাছি পেনশন প্রাপকরা।
করোনাকালে লকডাউনের কারণে রাজস্ব আদায় মুখ থুবড়ে পড়ার কারণেই বকেয়া থেকে গিয়েছিল ওই তিন কিস্তি ডিএ। বলা হয়েছিল, পরবর্তীকালে আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। করোনা পর্ব মিটে গিয়েছে প্রায় চার বছর। সংসদে দাঁড়িয়ে রেকর্ড রাজস্ব আদায়ের কৃতিত্ব নিতে কুণ্ঠা করেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এদিকে লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্রের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বকেয়া ডিএ বকেয়া মেটানো হবে না।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সমাজবাদী পার্টির উত্তরপ্রদেশের সাংসদ আনন্দ ভাদোরিয়ার প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। তিনি জানান, কোন কোন কিস্তির ডিএ ফ্রিজ করা হয়েছিল। সেখানেই ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ও ৭ জুলাইয়ের পাশাপাশি ২০২১ সালের ১ জানুয়ারির ডিএ ফ্রিজ করার কথা জানানো হয়। এই তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এই বকেয়া মেটানো হবে না। ফলে তাঁরা এই খাতে কত টাকা বা কত শতাংশ ডিএ পাবেন, সেই সংক্রান্ত কোনও উত্তর দেওয়ার প্রশ্নই নেই।
কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী যে যুক্তি খাড়া করেছেন, তা দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ! তিনি বলেছেন, “২০২০ সালে করোনার কারণে আর্থিক ক্ষতি এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্প খাতে ব্যয়ের জের বইতে হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের পরেও। ফলে, এরিয়ার হিসেবে বকেয়া ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়।” এখানেই প্রশ্ন তুলছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, কেন্দ্রের এই যুক্তি ধোপে টিকবে না। কেন্দ্র চাইলে কর্মীদের এই বকেয়া সহজেই মিটিয়ে দিতে পারত। গত তিন বছরে একাধিকবার দেশের আর্থিক পরিস্থিতি বিশ্বের উন্নত দেশগুলির সঙ্গে তুলনা করে মানুষের আস্থা অর্জন করতে চেয়েছে মোদী সরকার। তাহলে কি শুধু ৩০ হাজার কোটি টাকার জন্য বঞ্চিত হলেন কেন্দ্রীয় কর্মী ও পেনশন প্রাপকরা? উঠছে প্রশ্ন। সরব হয়েছে একাধিক মহল।
এপ্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধতে ছাড়েননি রাজ্য কর্মচারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান মানস ভুঁইয়া। “কেন্দ্র এতদিন বিরোধী রাজ্যগুলির টাকা আটকে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর বারবার আঘাত করে গিয়েছে। এবার তাঁদের নিজেদের কর্মীদের ন্যায্য প্রাপ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নয়া নজির সৃষ্টি করলেন মোদিবাবু। কোটি কোটি টাকা কেন্দ্র আটকে রেখে দেওয়া সত্ত্বেও বাংলার মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ বাড়িয়েছেন। ফলে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরে কর্মচারীদের ডিএ নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্তত কিছু না বলাই ভালো”, সাফ জানিয়েছেন তিনি।