: চারতলা বাড়িটার পাশেই একটা ফাঁকা জমি। আর সেই জমিটাই এখন রীতিমতো ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়ে উঠেছে। রাতেরবেলা যে কেউ লুকিয়ে চুরিয়ে এমন ফাঁকা জমি পেলেই নিজের বাড়ির আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন। শিলিগুড়ি শহরজুড়ে এমন অনেক ফাঁকা জমিই মিনি ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়ে গিয়েছে। বিষয়টা যে পুরনিগমের জানা নেই, তা নয়। শিলিগুড়ি পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকারের বক্তব্য, ‘শহরের মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। নিজের শহরকে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব শহরবাসীরও রয়েছে।’
এমনিতেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকা আবর্জনা যে কোনও শহরের সামনে একটা বড় সমস্যা। তার ওপর শিলিগুড়ি শহরের যেখানে সেখানে ফাঁকা জমিগুলিতে যদি এভাবে আবর্জনার স্তূপ জমতে থাকে, তাহলে তো নিস্তার নেই। এমন অবৈধ ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ধাক্কায় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেইসব এলাকার পাশ দিয়ে চলাই দায়। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে যেতে হয়।
শিলিগুড়িতে এখন অনেক বহুতল গড়ে উঠেছে। সেইসব বহুতলের পাশে ফাঁকা পড়ে থাকা জমিগুলির বেশিরভাগই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ আবাসন থেকে ফাঁকা জমিতে নিজের বাড়ির আবর্জনা ছুড়ে ফেলছেন। আবার অনেকে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে জঞ্জাল ফেলে দিচ্ছেন। এতেই বাড়ছে সমস্যা। প্রায় প্রতিটি পাড়ার এই অবৈধ ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা গন্ধের জেরে টেকা দায় হয়ে পড়ে আশপাশের বাসিন্দাদের। বাড়ে মশার উপদ্রবও।
এই অবস্থা শুধু শিলিগুড়ি শহরের কোনও একটি এলাকার নয়। বরং শহরজুড়েই এমন ছবি দেখা যাচ্ছে। ঘোগোমালি, আশিঘর, ডাবগ্রাম, হাকিমপাড়া, হায়দরপাড়া, চম্পাসারি, প্রধাননগর সহ সব জায়গারই একই অবস্থা। তবে এর দায় যে শুধু একা পুরনিগমের তা কখনোই নয়। বরং এই পরিস্থিতির দায় বেশি বর্তায় সাধারণ মানুষের ওপরেই। নিজেদের চারপাশ, এলাকা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব এলাকাবাসীরও বটে। কিছু মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্য ভুগতে হচ্ছে সকলকে।
আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা কবিতা দাম তো বলেই ফেললেন, ‘আমাদের এলাকাতেও এমন ফাঁকা জায়গা রয়েছে। যেখানে আবর্জনার ঢিপি জমে গিয়েছে। তা ঠিকঠাক পরিষ্কার তো হয়ই না। তার ওপর সেখানেই অনেকে আবর্জনা ফেলে চলে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুরনিগমের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে সাধারণ মানুষকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।’
হাকিমপাড়ার অরুণ মজুমদারের কথায়, ‘ফাঁকা জমিতে কাউকে আবর্জনা ফেলতে বারণ করলে শোনেন না। রাতে সকলের চোখের আড়ালে এসে আবর্জনা ফেলে যান অনেকে। বেশি বলতে গেলে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার জমে থাকা আবর্জনা থেকে অনেক রোগ ছড়াতে পারে। এ বিষয়ে পুরনিগমের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
কিন্তু সাধারণ মানুষকেও বিষয়টা বুঝতে হবে।’শিলিগুড়ি পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকারের বক্তব্য, ‘যেসব ফাঁকা জায়গার মালিকদের খোঁজ পাওয়া যায়নি, সেই জায়গাগুলোতে বোর্ড বসানো হচ্ছে। ফাঁকা জায়গায় যাতে এভাবে কেউ আবর্জনা না ফেলেন, সেজন্য অনুরোধও করা হচ্ছে। তবে কর্মসূত্রে বা ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে থেকে আসা অনেকে এমন কাজটা বেশি করছেন বলে মনে হচ্ছে।’