ভবানীপুর থেকে লেঙড়ে লেঙড়ে ওপারে গিয়েছিল নদী পেরিয়ে। শুভেন্দুকে হারাব, গদ্দার। আরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গদ্দার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘৯৮ সালে ফ্যালফ্যাল করে ঘুরতেন। অটলজি, ভারতরত্ন, আমাদের সম্পদ আশ্রয় দিয়েছিলেন। নইলে রাস্তায় ঘুরছিলেন তো! অটলজির সঙ্গে বেইমানি! হাসপাতালে শুয়েছিলেন, রাজীবজি এসে বললেন, আপনাকে যুবনেত্রী করে দিলাম। রাজীবজির সঙ্গে বেইমানি করেছেন। নন্দীগ্রামে ২৬ শতাংশ মুসলিম ভোট, ৬৫ হাজার। ভাবলেন, আমি ৬৫ হাজার দিয়ে শুরু করব। শুভেন্দু শূন্য থেকে শুরু করবে। ১৯৫৬ ভোটে হারিয়ে দিলাম। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে জিতিয়েছি। আমি পেরেছি, আপনারাও পারবেন। এভাবেই আজ বারুইপুর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এখানেই না থেমে শুভেন্দু বলেন, আমি ১৯৮৮ থেকে রাজনীতি করি। একসময় লক্ষ্মণ শেঠ আমাকে বলত, ‘ঢুকে দেখ, পা ভেঙে দেব’। ক্যালেন্ডার হয়ে গিয়েছে। সুশান্ত ঘোষকে দেখতে পাওয়া যায় না। আপনারা ভাবছেন এই ভাইপো অ্যান্ড কোম্পানি চিরদিন থাকবে! না থাকবে না। উত্তরপ্রদেশেও ১০ বছর আগে মুলায়ম সিংহ যাদব থাকবেন জানত সকলে। বিহারে বলত, ‘সমোসা মে আলু, অউর বিহার মে লালু’। জঙ্গল রাজ ছিল, খতম হয়ে গিয়েছে। অশ্বমেধের ঘোড়া নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি। আটকাবেন কী করে, ২১ রাজ্যে বিজেপি। আমার গাড়ি ভাঙলেন
। দিল্লিতে তো আপনাদের সাংসদরা যান! আমরা এগুলো করি না। কিন্তু আমি যদি দিল্লির প্রদেশ বিজেপি-কে ভিডিওগুলো দেখিয়ে বলি, পার্লামেন্ট অবধি যেতে পারবেন তো! আমরা করব না। চিন্তা নেই। বলছি, ধরে নেন। আমরা তো সমুদ্র, তোমরা পচা পুকুর। অমিত শাহ গতকাল বলেছেন, আয়ুষ্মান ভারত দিল্লিত চালু হয়েছে। অভি বঙ্গাল বাকি হ্যায়। অগলে সাল বঙ্গাল মে ভি চালু হো জায়েগা। এর আগে বারুইপুরেই শুভেন্দুর কর্মসূচি ঘিরে ঝামেলা হয়েছিল। সেখানে তাঁর উপর হামলা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন শুভেন্দু। এর পর কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বারুইপুরেই এসপি অফিসের বাইরে প্রতিবাদ সভা করেন শুভেন্দু। আর সেখান থেকেই তৃণমূলকে আক্রমণ করেন তিনি। সেখানে শুভেন্দু বলেন, “এই জেলায় গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। আমাদের করের টাকায় বেতন নেওয়া পুলিশ এর জন্য দায়ী। পুলিশ, কতগুলো চোর আইপিএস অফিসার মিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভাইপোর ইশারায় জেলাকে কার্যত জতুগৃহে পরিণত হয়েছে।”
ভোট পরবর্তী হিংসায় বিজেপি কর্মীদের খুন করা হয়েছে বলে এদিন অভিযোগ করেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে জেলায় হিন্দুদের ভোট দিতে হয়নি বলেও অভিযোগ করেন। তাঁর বক্তব্য, “গত লোকসভা নির্বাচনে জেলায় কোনও হিন্দুকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। যা খুশি করা হয়েছে। ক্যানিং, গোসাবা, মগরাহাট, মেটিয়াব্রুজ, ফলতা, ডায়মন্ডহারবার, এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে ‘২৪-এ ভোট লুঠ হয়নি। প্রত্যেক বুথে আট জন করে পোলিং এজেন্ট রাখা হয় বিশেষ সম্প্রদায়ের, বিশেষ গুন্ডাদের, শান্তির ছেলেদের। নিউটনের তৃতীয় সূত্র আছে, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান এবং বিপরীতধর্মী প্রতিক্রিয়া আছে। পৃথিবীটা গোল হবে। সব হিসেব হবে।”
শুভেন্দু যখন জয় শ্রী রাম স্লোগান দিচ্ছেন তখন বেশ কিছু কর্মী তাঁর সঙ্গে গলা মেলান। কিন্তু, স্লোগানের ঝাঁঝ কম দেখে সঙ্গে সঙ্গেই শুভেন্দু বলে ওঠেন, আরও জোরে, আরও জোরে বলুন। ৬ তারিখে তো রাম নবমী। এথন থেকে প্র্যাকটিস করতে হবে তো! ফের কিছুটা থেমে ফের রণ হুঙ্কারের সুরেই দেন জয় শ্রী রাম। পাল্টা গর্জে ওঠেন সমবেত কর্মীরা। সুর এক্কেবারে সপ্তমে। পিছনে তখন বসে অগ্নিমিত্রা পাল, তাপস রায়ের মতো নেতারা। তাঁদেরও গলা মেলাতে দেখা যায় শুভেন্দুর সঙ্গেই। রামনবমীর আগে হিন্দুদের একজোট হতেও আহ্বান জানান শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, “হিন্দুরা, যদি বাঁচতে চাও বিভেদ ভুলে এক হও। জনতার জাগরণ, মমতার বিসর্জন, বেকারদের কান্না…মমতার বিসর্জন, নারীদের কান্না, মমতার বিসর্জন। রামনবমী হচ্ছে ভাল করে করছেন, তারপর হনুমান জয়ন্তী করবেন, হিন্দু জেগে গিয়েছে। আমরা ৪০ পার্সেন্ট ভোট পাচ্ছি। হিন্দুারা যাঁরা ভোট দিতে যান না, দয়া করে বাড়ি থেকে বেরোন। বাংলাদেশ দেখছেন তো, ভোট নষ্ট করবেন? তৃণমূল, কংগ্রেস সিপিমএকে দেবেন? পরিবেশ তৈরি করে দেব, জেলে যাবে। মোদিজির স্লোগান না খায়ুঙ্গা না খানে দুঙ্গা।”