সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষ এসেছেন এখানে। ধর্ম তো মুখে প্রচার করে হয় না। ধর্ম মানে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া। মা-মাটি-মানুষ ভাল থাকলেই, আমি ভাল থাকব। তীর্থস্থান সবার জন্য। দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের আগে আজ মহাযজ্ঞে মা-মাটি-মানুষ গোত্রে পুজো দিয়ে ধর্মীয় মিলনের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পূর্ণাহুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মহাযজ্ঞের পরে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, নিজের গোত্রে পুজো দেন না। বরং চিরকালই ‘মা-মাটি-মানুষ’ গোত্রে পুজো দিয়ে এসেছেন। কারণ সাধারণ মানুষের ভালো হলেই নিজের ভালো হবে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। যে সাধারণ মানুষ বুধবারই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে দর্শন করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে মন্দিরের উদ্বোধন করা হবে। আর তারপর থেকে জগন্নাথ প্রভুর দর্শন করতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
বুধবারের অনুষ্ঠানসূচি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বুধবার দুপুর ২ টো ৩০ মিনিট থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে। দুপুর তিনটেয় দ্বারোঘাটনের অনুষ্ঠান হবে। দ্বারোদ্ঘাটনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।” বুধবার মেগা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে আজ(মঙ্গলবার) দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে ধ্বজা ওড়ানো হয়। মহাযজ্ঞেও যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ণাহুতির পরে শরবতের গ্লাস তুলে দেন পুরোহিতদের হাতে। যাঁরা দিঘায় জগন্নাথ দেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠার আচার-অনুষ্ঠান পালনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। পুরোহিতদের হাতে শরবত তুলে দেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ যখন মহাযজ্ঞ হল, তখন পুরোহিতরা আমার গোত্র জিজ্ঞাসা করছিলেন। ওঁরা আমার গোত্র জানেন।
আমি আমার গোত্রে পুজো করি না। আমি পুজো করি সবার জন্য – মা-মাটি-মানুষ গোত্রে। এটা আমার চিরকালের অভ্যেস। সব মা-মাটি-মানুষ ভালো থাকলে আমি ভালো থাকব। তাই সবার হয়ে অর্পণ করা হল। সেইসঙ্গে নাম না করে বিজেপিকেও খোঁচা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে সব ধর্ম, সব বর্ণের মানুষরা এসেছেন। তাঁরা সকলেই অতিথি। আর মুখে প্রচার করে ধর্ম পালন করা যায় না। ধর্ম হল একটা জিনিস, যা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায় বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারইমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একদিকে দেবতার আরাধনা, অন্যদিকে মানুষের মিলনক্ষেত্র রূপে সেজে উঠেছে দিঘার সমুদ্রসৈকত। বাংলার গর্ব, সংস্কৃতি আর সম্প্রীতির মিলনস্থল হয়ে উঠছে নবনির্মিত দিঘার জগন্নাথধাম।
তাঁর পাদস্পর্শে সমৃদ্ধ হবে এই পুণ্যভূমি। ভক্তি, শ্রদ্ধা, গৌরব আর বিশ্বাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে সমুদ্র শহর দিঘার মাটিতে। প্রভু জগন্নাথদেবের আগমন ঘিরে রীতি মেনে চলছে হোম-যজ্ঞ, পূজা, শঙ্খধ্বনি। কলিঙ্গ শৈলীর সূক্ষ্ম ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা দিঘার জগন্নাথদেবের মন্দির কেবল স্থাপত্যই নয়; এটি আমাদের ভক্তি, শ্রদ্ধা আর আবেগের মূর্ত প্রতীক। গতকাল তিনি বলেছিলেন, আজ দিঘার নবনির্মিত প্রভু জগন্নাথদেবের মন্দির সরেজমিনে পরিদর্শন করলাম এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে সমস্ত বিষয় পর্যবেক্ষণ করলাম। আগামিকাল মহাযজ্ঞ এবং অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন। আধ্যাত্মিকতার আলোয় এবং সমুদ্রের সৌন্দর্যে বাংলার পুণ্যভূমি আন্তর্জাতিক পর্যটনক্ষেত্র রূপে ধরা দেবে বিশ্ববাসীর মনে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলার কৃষ্টি, সৃষ্টি, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে চির আবদ্ধ থাকব আমরা। মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
মন্দিরে পৌঁছে তিনি যজ্ঞে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “জগন্নাথ মন্দির চত্বরের পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা হবে এবং এই বার্ষিক ধর্মীয় উৎসবকে রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া হবে।” মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকছেন তৃণমূলের একঝাঁক নেতা, সাংসদ, বিধায়ক। রয়েছেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে জুন মালিয়া, বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। মূল যজ্ঞমঞ্চের অদূরে মঞ্চে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। টলিউডের নামী প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী, অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক অরিন্দম শীল, দেবলীনা কুমার, শিল্পপতি রুদ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখকে দেখা গিয়েছে মন্দিরের কাছে তৈরি মঞ্চে। মমতা বলেন, বুধবার অনুষ্ঠান আছে। সে জন্য অদিতি (মুন্সি, গায়িকা, বিধায়ক) এসেছে। ডোনা গাঙ্গুলি, জিৎ গাঙ্গুলি এসেছে। দেব, রচনা, দেবলীনা, সকলেই এসেছে।