নয়াদিল্লির হাত শক্ত করতে অত্যাধুনিক ‘ইগলা-এস’ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাল মস্কো। ইতিমধ্যে চিন এবং তুরস্কের সমর্থন মেলায় পুরোদস্তুর যুদ্ধের জিগির তুলেছে ইসলামাবাদ। দিয়েছে পরমাণু হামলার হুমকিও। এই পরিস্থিতিতে ক্রেমলিনের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সরবরাহকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন দুনিয়ার তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। রুশ ‘ইগলা-এস’ ক্ষেপণাস্ত্র হল প্রকৃতপক্ষে স্বল্পপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ভেরি শর্ট রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সেগুলির নতুন একটি ব্যাচ ভারতীয় ফৌজের কাছে পাঠিয়েছে মস্কো। এর সাহায্যে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করা যাবে ড্রোন এবং যুদ্ধকপ্টার। এককথায় ক্রেমলিনের ‘ব্রহ্মাস্ত্রে’ বাড়তি সুরক্ষাকবচ তৈরি করতে সক্ষম হবে সেনা। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ‘ইগলা-এস’ ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে ২৬০ কোটি টাকার চুক্তি করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর পরই স্বল্পপাল্লার বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলিকে ভারতীয় সেনার কাছে পাঠিয়ে দেয় মস্কো। অত্যাধুনিক ওই হাতিয়ারের দু’টি অংশ রয়েছে।
একটি ফানেলের মতো দেখতে লঞ্চার এবং অপরটি তার ভিতরে থাকা রকেট আকৃতির ক্ষেপণাস্ত্র। রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এটি মানব বহনযোগ্য। অর্থাৎ পদাতিক সৈনিকেরা সহজেই এই ক্ষেপণাস্ত্রকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র বয়ে নিয়ে যেতে পারেন। এর জন্য কোনও গাড়ি বা ট্রাকের প্রয়োজন নেই। হামলার সময়ে অবশ্য লঞ্চার কাঁধে রেখে ‘ভূমি থেকে আকাশ’ (পড়ুন সারফেস টু এয়ার) ক্ষেপণাস্ত্রটিকে নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে ছুড়তে হয়। মস্কোর স্বল্পপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিতে রয়েছে ‘ইনফ্রারেড হোমিং’ প্রযুক্তি। তাপ চিহ্নিত করে আকাশের লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করে ‘ইগলা-এস’। লঞ্চার থেকে ছোড়ার পর যুদ্ধকপ্টার এবং ড্রোন খুঁজে নিয়ে তার উপর হামলা করার ক্ষমতা রয়েছে রাশিয়ার তৈরি এই অত্যাধুনিক অস্ত্রের। এর পাল্লা ছয় কিলোমিটার।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার উচ্চতায় উড়তে থাকা যে কোনও কপ্টার বা ড্রোনকে এর সাহায্যে ধ্বংস করতে পারবে ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, বর্তমানে ঠিক এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের খোঁজে রয়েছে ভারতের বিমানবাহিনী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ১৯৯০ সাল থেকে ‘ইগলা’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আসছে এ দেশের ফৌজ। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটির নতুন যে ব্যাচটি বাহিনীর হাতে এসেছে তা পুরনো অস্ত্রগুলির নিরিখে অনেক বেশি উন্নত। পাশাপাশি চলছে পুরনো ‘ইগলা’র সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া।
এর জন্য দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির সাহায্য নিচ্ছে কেন্দ্র। ‘ইগলা’র নতুন ব্যাচ হাতে পাওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে আরও ৪৮টি লঞ্চার এবং ৯০টি ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বরাত দিয়েছে ভারতীয় সেনা। স্বল্পপাল্লার লেজ়ার বিম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থারও সন্ধান চালাচ্ছে ফৌজ। নয়াদিল্লির মূল মাথাব্যথা পাক বাহিনীর ড্রোন। যুদ্ধের সময়ে সেগুলিকে দ্রুত চিহ্নিত এবং ধ্বংস করা যে কতটা জরুরি তা ভালই জানেন এ দেশের সেনাকর্তারা।