কিয়ের স্টার্মারের হাত ধরে অবশেষে দু’দেশের মধ্যে জট কাটল মুক্ত বাণিজ্যের। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বললেন, ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’। জানা গিয়েছে, আজ মঙ্গলবার ভারত ও ব্রিটেন এই বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছে। যার ফলে বেশিরভাগ পণ্য ও পরিষেবার উপর থেকে শুল্কের অপসারণ হবে। গত ২৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের লন্ডন সফরে যান। তারপর উভয় দেশই ২৯ এপ্রিল আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই আলোচনার সময় বাড়ানো হয়। এই মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শুল্কবাণে’ বিদ্ধ বিশ্ব বাণিজ্য। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি লন্ডনের মধ্যে এই চুক্তি ঘোষিত হওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এক্স হ্যান্ডেলে এই বিষয়ে জানিয়ে মোদি লেখেন, ‘আমি আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের সঙ্গে কথা বলতে পেরে আনন্দিত।
এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ভারত এবং বিট্রেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এতে দু’দেশের অবদান অনস্বীকার্য। এই যুগান্তকারী চুক্তি আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও মজবুত করবে এবং উভয় দেশের অর্থনীতিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বাড়াবে। আমি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টার্মারকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। তাঁকে স্বাগত জানাতে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’বহু বছর ধরেই মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দর কষাকষি চলছিল। অ্যালকোহল ও মোটর গাড়ির উপর ভারতের আরোপিত আমদানি শুল্ক হ্রাস করা, এবং কাজের উদ্দেশ্যে ভারত থেকে ব্রিটেনাভিমুখী কর্মপ্রার্থীদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ।
অ্যালকোহল ও মোটরগাড়ির উপর আমদানি শুল্ক হ্রাসে নরম মনোভাব দেখালেও ‘অভিবাসন’ (ইমিগ্রেশন) ইস্যুতে ভারতের কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা প্রথম থেকেই বেশি ছিল। ২০২১ সালে বরিস জনসনের আমলে নতুন করে দু’দেশের মধ্যে এই চুক্তি আলোচনা শুরু হয়। তারপর লিজ ট্রাসের জমানাতেও জট খোলার কোনও সম্ভাবনা দেখা যায়নি। তাঁর মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান মন্তব্য করেছিলেন যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হলে ব্রিটেনে ভারতীয় অভিবাসনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাতে নয়াদিল্লি তো বটেই, ব্রিটেনের ভারতীয়দের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। যার জেরে ব্রাভারম্যান পদত্যাগ করেন। তারপর দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল না দিতে পারার ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে লিজ ট্রাসকেও সরে যেতে হয়।
এরপর ২০২২ সালে ব্রিটেনের ক্ষমতায় আসেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। ফের নতুন করে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ২০২৩ সালে দিল্লি অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে এনিয়ে তিনি মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। যা ফলপ্রসুও হয়েছিল। তার পর এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল দুদেশের মধ্যে। কিন্তু এর মাঝেই ব্রিটেনে সরকার গড়ে স্টার্মারের লেবার পার্টি।