চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অর্ধনগ্ন মিছিল শুরুর আগেই ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হলো কলকাতায়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীরা জমায়েত শুরু করতেই পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। আন্দোলনকারীদের টেনে-হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়, যা ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অধিকার মঞ্চে’র চাকরিহারা শিক্ষকরা আজ শুক্রবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। শিয়ালদা থেকে ধর্মতলা এবং পরে সেখান থেকে নবান্নে একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন জমা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তবে জমায়েতের আগেই শিক্ষকদের আটক করল পুলিশ। এদিন শিয়ালদা রেল স্টেশন এবং মেট্রো স্টেশন থেকে বের হতেই একে একে শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রিজন ভ্যানে তুলতে থাকে পুলিশ। চাকরিহারাদের কর্মসূতি ঠেকাতে শিয়ালদা চত্বরে কলকাতা পুলিশের তরফে ৪ জন ডেপুটি কমিশনারকে মোতায়েন করা হয়। চাকরিহারা শিক্ষকরা জানিয়ে দেন, তাঁরা পরীক্ষায় বসতে চান না। তাঁরা চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি জানান। সেই দাবিতেই এদিন শিয়ালদা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত অর্ধনগ্ন মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। কিন্তু, জমায়েতের আগেই শিয়ালদা স্টেশন চত্বর থেকেই তাঁদের একে একে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তুলতে থাকে পুলিশ।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষিকা পুলিশের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা কোনও রকম বিশৃঙ্খলা তৈরি না করা সত্ত্বেও আমাদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ চাকরিহারাদের অভিযোগ, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে এবং সরকার তাদের দাবি শুনতে নারাজ। এই ধরপাকড়ের ফলে আন্দোলন আরও জোরালো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে শুক্রবার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু নতুন বিজ্ঞপ্তি ভুলে ভরা এবং আইনি জটিলতায় আবার আটকে যাবে বলে অভিযোগ তুলেছে আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনীতিবিদরাও। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, “যারা দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়ায় চিহ্নিত নন, তাদের এই নিয়মে অনেকটা সুবিধা হবে। নতুন চাকরিপ্রার্থীরা এই নিয়মে কিছুটা অসুবিধার মুখে পড়বেন। ইন্টারভিউ ও পড়ানোর দক্ষতায় নম্বর বেশি দেওয়ার সুযোগ থাকলে সেখানে কারচুপির সম্ভাবনা থাকে। সরকার ইচ্ছা করলে সেখানে কাউকে কম নম্বর বা কাউকে বেশি নম্বর দিতে পারে। আমরা বুঝতে পারছি না সরকার নতুন কোনও আইনি জটিলতাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে কি না।” আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, “নতুন বিধি আগের থেকে অনেকটা পরিবর্তন করা হয়েছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বরাদ্দ নম্বর ৩৫ থেকে কমিয়ে ১০ করা হয়েছে। এর মানে যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা খারাপ তাদের নেওয়ার রাস্তা তৈরি করা।” কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, “রাজ্য সরকার ইচ্ছা করে বারবার জটিলতা তৈরি করছে। কারণ এই রাজ্য সরকার চাকরি দিতে চায় না। রাজ্য সরকারের ভাঁড়ার সম্পূর্ণভাবে শূন্য। এই সরকার পড়ানোর দক্ষতা ও ইন্টারভিউর নম্বর বাড়িয়ে যোগ্যদের সঙ্গে অযোগ্যদেরও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছে। কারণ অযোগ্যরা টাকা দিয়েছে।” এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মেনে চাকরিহারা শিক্ষকদের বয়সের ছাড়ের পাশাপাশি শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার বিষয়টিকেও পরীক্ষায় আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই বিজ্ঞপ্তি এ কারণেই জারি করা হয়েছে যাতে আরও কোনওরকম নিয়োগ না হয়।
রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে টাকার বিনিময়ে যাদের চাকরি দিয়েছে তাদের চাকরিটাকেই পুনর্বহাল করার একটা পরিকল্পনা। বিজ্ঞপ্তিতে যে সব রুলসের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আদালতে বেআইনি বলে ঘোষিত হবে। ফলে নিয়োগ হবে না। এটাই মুখ্যমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য। আসলে বিজ্ঞাপন, মেলা, খেলা, পুজো, ঈদ, পুরোহিত ভাতা, ইমাম ভাতা দিয়ে সরকারি কোষাগার শূন্য করে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওঁর কোনও ইচ্ছে নেই স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের। স্কুল শিক্ষক নিয়োগ করার মতো স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি এই সরকারের নেই। এই যে অভিজ্ঞতার নিরিখে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে এটা তো উদ্দেশ্য নিয়ে। কারণ, জানে এই বিজ্ঞপ্তিতে নিয়েও আদালতে মামলা হবে, নিয়োগ করতে হবে না।