সাত রাজ্য থেকে অন্তত ১৫ ‘চর’ গ্রেফতার! প্রত্যেকের সঙ্গেই পাকিস্তানের কোনও না কোনও যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। কেউ বার বার পাকিস্তানে গিয়েছেন, তবে সে সব সফরের উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেননি। কারও সঙ্গে আবার পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে! গুপ্তচরবৃত্তির এই চক্র ভারতের গোয়েন্দা বিভাগকে ভাবাচ্ছে। তা কত দূর বিস্তৃত, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারত-পাক সংঘাত এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। সক্রিয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাও ।
এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের সন্দেহে যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে ‘চরবৃত্তির’ অভিযোগ, তাঁরা রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং পঞ্জাব থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের মধ্যে আছেন ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে নেটপ্রভাবী, সিআরপিএফ জওয়ান— নানা পেশার মানুষ।
পাকিস্তানে তথ্য পাচারের অভিযোগে ধৃতদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম জ্যোতি মলহোত্রা। জনপ্রিয় একটি ইউটিউব চ্যানেল চালাতেন তিনি। একাধিক বার পাকিস্তান থেকে ঘুরে এসেছেন। দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল জ্যোতির। পাক গোয়েন্দা কর্তাদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। জ্যোতিকে গ্রেফতার করেছিল হরিয়ানা পুলিশ।
পাকিস্তানের ‘চর’ সন্দেহে সম্প্রতি মহারাষ্ট্র থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে রবীন্দ্র বর্মা নামের ২৭ বছরের এক ইঞ্জিনিয়ারকেও। মুম্বইয়ের একটি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সন্ত্রাসবাদ দমন শাখার (এটিএস) আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, নৌসেনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রবীন্দ্রের কাছে ছিল। সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজ নিয়ে তিনি কাজ করতেন। অভিযোগ, ফেসবুকে ‘হানিট্র্যাপ’-এর শিকার হন রবীন্দ্র। পাকিস্তানের মহিলা এজেন্টরা তাঁকে ভুলিয়ে তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করেছেন। যে সমস্ত জায়গার ছবি তোলা নিষিদ্ধ, সেখানকার ছবি এঁকে পাক তরুণীদের পাঠিয়ে দিতেন এই ইঞ্জিনিয়ার।
কিছু দিন আগে দিল্লি থেকে মোতিরাম জাট নামের সিআরপিএফের এক জওয়ানকে গ্রেফতার করে এনআইএ। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিভিন্ন কাজ এবং অভিযানের খুঁটিনাটি তথ্য তিনি বাইরে পাচার করে দিতেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকদের। আপাতত তিনি এনআইএ হেফাজতে রয়েছেন।
ভারতীয় সেনার গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপন তথ্য পাকিস্তানিদের কাছে পাঠানোর অভিযোগে গুজরাত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৮ বছরের স্বাস্থ্যকর্মী সহদেব সিংহ গোহলিকে। সীমান্তঘেঁষা কছ এলাকার বাসিন্দা তিনি। অভিযোগ, সহদেব বায়ুসেনা এবং বিএসএফের নতুন পরিকাঠামো বিদেশি এজেন্টকে পাঠিয়েছেন।
হরিয়ানা থেকে পাক ‘চর’ সন্দেহে একাধিক গ্রেফতারির খবর মিলেছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, পাকিস্তানের আধিকারিকেরা এই রাজ্যকে ‘টার্গেট’ করেছেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে টোপ দিয়ে তাঁদের হয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। ২৫ বছর বয়সি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র দেবেন্দ্র সিংহ ধিলোঁ সমাজমাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি পোস্ট করেছিলেন। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ রয়েছে তাঁর। এর পর পানিপথ থেকে গ্রেফতার করা হয় ২৪ বছরের নিরাপত্তারক্ষী নৌমান ইলাহিকে। অভিযোগ, আত্মীয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পাক গোয়েন্দা এজেন্টদের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান চলত তাঁর। ২৩ বছরের আরমান এবং তারিফকেও অনুরূপ অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
পাকিস্তানের ‘চর’ সন্দেহে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে রাজস্থানের এক সরকারি আধিকারিককেও। ৪৯ বছরের শকুর খান রাজস্থানের প্রাক্তন মন্ত্রীর সহকারী হিসাবেও কাজ করেছিলেন। অভিযোগ, পাকিস্তানে অন্তত সাত বার যাতায়াত করেছেন তিনি। তাঁর একাধিক লেনদেন সন্দেহজনক বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পৃথক একটি মামলায় রাজস্থানের বাসিন্দা ৩৪ বছরের কাশিমকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। অভিযোগ তিনি ভারতীয় সিম কার্ড পাকিস্তানে চালান করতেন। দু’বার নিজে পাকিস্তানে গিয়েছেন। পুলিশের দাবি, পহেলগাঁও হামলার পরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফোন থেকে মুছে ফেলেছেন বলে জেরায় স্বীকার করেছেন কাশিম।
চরবৃত্তির জাল বিস্তৃত উত্তরপ্রদেশেও। মোরাদাবাদ থেকে শাহজ়াদ নামের এক ব্যবসায়ী ধরা পড়েন স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে। একাধিক বার পাকিস্তানে গিয়েছেন তিনি। অভিযোগ, সংবেদনশীল তথ্য পাক এজেন্টদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন।