শ্রাদ্ধ বাড়িতে আসা নিয়ে কটুক্তি করায় এক যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠলো প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রতিবেশী জনা চারেক যুবক ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা অমিত বাউরি উপর চড়াও হয়ে তাকে লোহার পাঞ্চ জাতীয় কিছু দিয়ে হামলা চালায় ও মারধর করে। তাতে গুরুতরভাবে আহত হয় ঐ যুবক। সেই ঘটনার দু’দিন পরে শেষ পর্যন্ত শনিবার বিকেলে ঐ যুবকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার বক্তারনগর এলাকায়। আর এই ঘটনার খবর পাওয়ায় এলাকার মানুষজন ক্ষোভে ফোটে পড়ে। রাতেই যুবককে মারধরে জড়িত হামলাকারী পরিবারের সদস্যদের উপর এলাকার বাসিন্দা ও মৃতের পরিজনেরা চড়াও হন। খবর পেয়ে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছে তাদের বাধা দিতে যায়।
তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের বাদানুবাদ ও ধস্তাধস্তি বেঁধে যায়। তাতে দুই পুলিশ অফিসার অল্পবিস্তর আহত হন। শনিবার রাতে থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রানিগঞ্জের বক্তারনগর এলাকায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে পুলিশের বিশাল বাহিনী কমব্যাট ফোর্স ও রেফ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার বক্তানগরের মহন্ত কুলিপুরে বৃহস্পতিবার দুপুরে সনাতন বাউরির বাড়িতে তার বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। সেই নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলো রানিগঞ্জের বক্তানগর মহন্ত কুলিপুরের বাসিন্দা বছর ৩০ এর অমিত বাউরি। সেই অনুষ্ঠানে একইভাবে নিমন্ত্রিত হয়ে আসে প্রতিবেশী কমল বাউরি। সেই সময় অমিত তার প্রতিবেশী কমল বাউরিকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে সৎকারের সময় আসেনি। আর এখন ভোজ খাওয়ার সময় কেমন চলে এলো ? এনিয়ে কমলের সঙ্গে অমিতের সেখানে বেশ কিছুক্ষন বাকবিতণ্ডাও হয়। খাবার খেয়ে অমিত এলাকার হনুমান মন্দিরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। এরপরে কমল বাড়ি ফিরে তার দুই কাকাতো ভাই জগন্নাথ বাউরির ছেলে পরিমল বাউরি ও বিমল বাউরিকে গোটা বিষয়টি জানায়। তখন তারা অমিত বাউরির খোঁজ শুরু করে। পরে তারা অমিতকে হনুমান মন্দিরের শুয়ে থাকতে দেখে। অমিত কিছু বুঝতে পারার আগেই পরিমলরা তাকে মারতে শুরু করে।
সেই মারধরে গুরুতর আহত হয় সে। এই ঘটনার খবর অমিত বাউরির স্ত্রী জানতে পারে। তিনি সেখানে গিয়ে তাদের মারধর করতে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করা হয় বলেও দাবি করেন তার স্ত্রী। আর এই ঘটনার পরে গুরুতরকভাবে আহত অমিত বাউরিকে প্রথমে রানিগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশকে সব ঘটনা বলার পরে থানা থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য আলুগড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে চিকিৎসক সেখানে তার চিকিৎসা করে ওষুধ দিলে তারা রাতে অমিত বাউরিকে বাড়ি নিয়ে চলে আসেন। কিন্তু বাড়িতে থাকার সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বৃহস্পতিবার রাত্রে রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর শনিবার বিকেলে অমিতের সেখানে মৃত্যু হয়। এদিকে এই খবর পাওয়ার পর পরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে অমিতের পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয় পরিজনেরা। ঘটনার খবর পেয়ে রবিবার সকালে এলাকায় আসে বাউরি সমাজের সদস্যরা। তারা এই ঘটনায় যুক্ত থাকা মূল অপরাধীদের অবিলম্বে পুলিশ প্রশাসন খুঁজে বের করে গ্রেফতার করার দাবি জানান। শনিবার রাতে অমিত বাউরির বাবা মাধব বাউরি গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে পরিমল বাউরি সহ চারজনের নামে রানিগঞ্জ থানার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে এই ঘটনায় যুক্ত থাকা পরিমল বাউরিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। একই সঙ্গে রাতে ঘটনার সময় আরো দুই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
এদিকে, রবিবার সকালে ধৃতকে আসানসোল আদালতে পেশ করা হলে পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক তার জামিন নাকচ করে সাতদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে, রবিবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে অমিত বাউরির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রানিগঞ্জ থানার পুলিশ নিয়ে আসে। কিন্তু ময়নাতদন্তকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা অটোপসি সার্জেন না থাকায় সেই ময়নাতদন্ত এদিন করা সম্ভব হয়নি। সোমবার সকালে সেই ময়নাতদন্ত করা হবে বলে, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এই ঘটনা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, মৃত যুবকের পরিবারের তরফে নির্দিষ্ট করে কয়েকজনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তারমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঠিক কি কারণে এই ঘটনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিএনএস-এর নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে, ঠিক কি কারণে ঐ যুবকের মৃত্যু হয়েছে।