তাঁত শিল্পীদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে আক্ষেপ—‘আমাদের পাশে কেউ নেই, পাশে থাকলে হস্তচালিত তাঁত শিল্পের এই করুণ পরিণতি হতো না।’ রানাঘাট ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তাঁত শিল্পীরা আজ চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমানে তাঁত শিল্পে নেই সঠিক মজুরি, নেই কোনও কার্যকর সরকারি পদক্ষেপ। একসময়ের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। তাঁতিদের আশঙ্কা, এই গতিতে চললে ভবিষ্যতে আর কাউকে তাঁত বুনতে দেখা যাবে না।
নদীয়ার রানাঘাট, হবিবপুর, ফুলিয়া, শান্তিপুর । এই সব অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ এক সময় এই শিল্পের উপর নির্ভর করেই সংসার চালাতেন। কিন্তু দিনে দিনে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আজ হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র এই শিল্পে জড়িত রয়েছেন, তাও তাঁরা অনিশ্চয়তার মধ্যে।
রানাঘাটের অভিজ্ঞ তাঁত শিল্পী গোপাল বসাক, যিনি ৩০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত, জানাচ্ছেন ‘আগের মতো মজুরি এখন আর নেই। এক শ্রেণির মহাজন নিজেদের মুনাফা বাড়াতে তাঁতিদের শ্রমের সঠিক মূল্য দিচ্ছেন না। বাইরের রাজ্য থেকে আসা সস্তা ও যন্ত্রচালিত কাপড়ের চাপে হস্তচালিত তাঁতের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কোনও কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এখন দিনে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা রোজগার হয়, এতে সংসার চালানো অসম্ভব।’
একই সুরে কথা বলেন বর্ষীয়ান তাঁত শিল্পী সুজীব রায়ও। তাঁর মতে, মহাজনদের অতিরিক্ত মুনাফালোভ এবং সরকারের উদাসীনতাই এই শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আগে তাঁতিদের জন্য কিছু ছোটখাটো সরকারি সুবিধা থাকলেও এখন তা নেই বললেই চলে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন,‘দিনে মাত্র ১০০ টাকা আয়ে কীভাবে সংসার চলে?’
এই চিত্র শুধু কিছু শিল্পীর নয়, গোটা অঞ্চলের এক কঠোর বাস্তব। অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, নদীয়ার ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প একদিন ইতিহাসের পাতায় পরিণত হবে ।এই আশঙ্কা ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে।