এবার ডোমকল শহরের রাজনীতিতে বড়সড় ভাঙন ও পালাবদলের চিত্র উঠে এল। তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে একসঙ্গে প্রায় ৩০টি পরিবার, অর্থাৎ ১৫০ জনেরও বেশি সদস্য, যোগ দিলেন সিপিআই(এম)-এ। ঘটনাটি ঘটেছে ডোমকল পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে, যা এতদিন তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, এবং প্রশাসনিক অপারগতার অভিযোগ জমছিল। সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ, একাধিকবার তারা কাউন্সিলর ও পৌর প্রশাসনের কাছে তাঁদের সমস্যা নিয়ে গেলেও, মিলেছে কেবল আশ্বাস, বাস্তবে কোনো পরিবর্তন আসেনি। একাধিক প্রাক্তন কাউন্সিলর, পুর কর্মী ও সমর্থকরা এই নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন।
এই ক্ষোভই শেষমেশ দলত্যাগের রূপ নেয়। অভিযোগ উঠেছে, পৌর প্রশাসক ও বর্তমান বিধায়ক দলীয় অনুগতদের পক্ষেই সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ করেছেন, আর বাকিদের করা হয়েছে উপেক্ষিত। সেই অভিমান থেকেই তৃণমূলের ভিতরেই তৈরি হয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও বিভাজনের রেখা।
এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বামফ্রন্ট, বিশেষত সিপিআই(এম), এলাকায় নতুন করে সংগঠন গড়ে তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দলবদলকারীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন সিপিআই(এম)-এর ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রানা। তিনি বলেন, মানুষ আর স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির মধ্যে থাকতে চাইছে না। এই পরিবর্তন শুধুই দলীয় নয়, এটা একটা জন আন্দোলনের সূচনা।
এই রাজনৈতিক পালাবদলের পরিপ্রেক্ষিতে ডিওয়াইএফআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জির ডোমকল সফর ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার তিনি একটি পদযাত্রায় অংশ নিতে আসছেন ডোমকলে। সেই পদযাত্রা থেকে নতুন রাজনৈতিক বার্তা দিতে চলেছে সিপিআই(এম)। ডোমকলে দলের নতুন কর্মীভিত্তি এবং উত্তেজিত আবহকে কাজে লাগাতে মরিয়া বামেরা।
এদিকে শাসক শিবিরেও বিষয়টি ঘিরে নড়েচড়ে বসার ইঙ্গিত মিলেছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব কেউ কেউ ঘটনার গুরুত্ব স্বীকার করেছেন, তবে পুরো বিষয়টি ‘অন্তর্ঘাত’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। যদিও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
ডোমকলের রাজনৈতিক মানচিত্রে এই রদবদল আগামী পঞ্চায়েত ও পৌর নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শাসক ও বিরোধী দু’পক্ষই এখন নজর রেখেছে ডোমকলের দিকে, কারণ এখানে কোনও ছোট ঘটনা-ও বড় প্রভাব ফেলতে পারে জেলার রাজনীতিতে।