চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে প্রচুর পরিমানে ইলিশ, জাতীয় জলজ প্রাণী শুশুক বা গাঙ্গেয় ডলফিনের দেখা মিলতো রূপনারায়ণ নদের কোলাঘাটে। শুশুক কয়েক সেকেন্ডের জন্য জলের উপরে উঠে ‘ব্লিচিং’ করে আবার জলে ডুব দিত। সেই দৃষ্টিনন্দন নয়নাভিরাম দৃশ্য তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার জন্য কোলাঘাট সেতুর উপরে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতো ঘন্টার পর ঘন্টা। জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী শুশুক আবার মিষ্টি জলের ‘ডলফিন’ নামেও পরিচিত। জলজ প্রাণী শুশুক সাধারণ পরিষ্কার এবং গভীর জলে বসবাস করে। বতর্মানে রূপনারায়ণ নদের জল বিভিন্ন কারণে দূষণের শিকার। তার উপর নদের নাব্যতা কমে যাওয়ায় রূপালী শষ্য ইলিশের পাশাপাশি জলজ প্রাণী শুশুকের প্রাণও সংকটাপন্ন। আগে বর্ষার সময়ে প্রচুর ইলিশ রূপনারায়ণ নদে পাড়ি জমাতো নদের মিঠা জলে ডিম ছাড়ার জন্য।
বতর্মানে রূপনারায়ণ নদের জল দূষিত ও নাব্যতা কমে যাওয়ায় ইলিশের ডিম নষ্ট হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় মৎস্যজীবীরাও সংকটে। মৎস্যজীবীরা সারা দিন ইলিশের খোঁজে নৌকার হাল টেনে কোনদিন একটা বা দুটো আবার তিন-চার দিন ইলিশ না পেয়ে ঘরে ফিরে আসে। এছাড়াও রূপনারায়ণ নদের মোহনায় স্থানীয় মৎস্যজীবীরা প্রচুর সংখ্যায় ছোট আকারের জাল বিছিয়ে ইলিশ ধরে, যা রূপনারায়ণ নদে ইলিশ কমে যাওয়ার একটা বড় কারণ। বিশিষ্ট অধ্যাপক ডঃ আক্রামূল হক বলেন, একটা সময়ে কোলাঘাট এলাকার রূপনারায়ণ নদের ইলিশের কদর ছিল রাজ্য জুড়ে। স্বাদে-গন্ধে তার কোনো তুলনাই হত না।
কিন্তু রূপনারায়ণ নদের বুকে ক্রমাগতভাবে কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ারের ছাই, দূষিত বর্জ্য, তেল ইত্যাদি পড়ে চলেছে এবং বিভিন্ন জায়গায় চর জেগে উঠেছে। এছাড়াও সড়ক ও রেল সেতুর থামে রূপনারায়ণের জল বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় রূপনারায়ণ নদের গতি মন্থরতায় ভুগছে। তাই ধিরে ধিরে রূপনারায়ণ নদ তার কৌলিন্য হারাতে বসেছে। বর্তমানে শ্যামপুরের গাদিয়াড়া ও গড়চুমুকে হুগলি নদীতে ইলিশের দেখা মিললেও তারা আর রূপনারায়ণ নদ বাহিত কোলাঘাট মুখো হচ্ছে না। আগে বড় বড় লঞ্চ চললেও এখন আর সেই সব লঞ্চকে রূপনারায়ণ নদের বুকে ভাসতে দেখা যায় না। পরিবেশবিদদের অভিমত ইলিশ ও শুশুক উভয়েই বিপন্নতার শিকার। রসনাতৃপ্তির জন্য রূপনারায়ণ নদকে যেমন ইলিশের বসবাসের উপযোগী করে তোলা উচিত, তেমনই জলের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য শুশুক সংরক্ষণও ভীষণভাবে জরুরি।