সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো এসএসসি ২০১৬ প্যানেলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে থেকে ১৭ জনকে বিধাননগর উত্তর থানায় তলব করল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের বিকাশ ভবন অভিযানের সময় সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর সহ সরকারি কর্মীদের বলপূর্বক আটকে রাখার পাশাপাশি কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের মারধর করার অভিযোগে ইতিমধ্যেই দায়ের হয়েছে স্বতোপ্রণোদিত মামলা। সেই মামলার তদন্তের স্বার্থে ১৭ আন্দোলনকারীকে আগামী ২১ তারিখ সকালে বিধাননগর উত্তর থানায় তলব করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ১৭ জন শিক্ষককে নোটিস পাঠিয়ে ২১ মে থানায় হাজিরা দিতে বলেছে পুলিশ। হাজিরা না দিলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র নির্দিষ্ট ধারায় গ্রেফতার করা হবে বলেও জানানো হয়েছে নোটিসে। আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা।
এসএসসি ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল হওয়ার পর চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষককর্মী। মিরর ইমেজ প্রকাশ ও বেশ কিছু দাবিতে বৃহস্পতিবার আন্দোলন অন্য চেহারা নেয়। দুই থেকে আড়াই হাজার লোক জড়ো হয়। বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে বিক্ষোভে বসেন। বিকেলে জানিয়ে দেন বিকাশ ভবন ঘেরাও করবেন আন্দোলনকারী। সেখানে আটকে পড়েন প্রচুর সরকারি কর্মচারী। পুলিশ তাঁদের বার করার সময় বাধা দেন শিক্ষকরা। তখনই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। পুলিশকে বলপ্রয়োগ করতে দেখা যায়। রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, ৭ ঘণ্টা ধরে পুলিশ বুঝিয়েছে। বিকাশ ভবনে ৫৫টি দপ্তর, ৫০০-৬০০ কর্মী রয়েছেন। একজন সন্তানসম্ভবা অসুস্থ বোধ করেছিলেন। কারও মা অসুস্থ। সন্ধের পর তাঁরা বেরতে চান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাঁদের বেরতে বাধা দেন। তাঁদের বের করতে গেলে বাঁধার মুখে পড়ে নূন্যতম বলপ্রয়োগ করা হয়েছে।
যা করা হয়েছে সমস্তটাই প্রোটেকল মেনে। বিক্ষোভ চলাকালীন আন্দোলনকারীরা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে, পুলিশকে মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই সূত্রেই পুলিশি তলব। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠনের নেতা চিন্ময় মণ্ডল। তিনি বলেন, ওরা তো আলাদা কেউ নয়, আমাদেরই সহযোদ্ধা। সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সর্বসম্মতিক্রমে। তাই ওরা একা নয়, আমরাও সবাই থানায় যাব। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সেদিন কি কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল যে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হল? চিন্ময়বাবু আরও বলেন, সরকার আমাদের চাকরি কেড়ে নিল, পুলিশ দিয়ে আমাদের মারল, আর এখন মামলা করছে। এই সরকারের কোনও জবাবদিহি নেই। তাঁর অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতেই পুলিশ এই ধরনের কৌশল নিচ্ছে।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারা শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও চাকরি ফেরৎ পাওয়ার দাবি নিয়ে বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। যাঁদের হাতে চক ডাস্টার থাকার কথা, তাঁরা হাতে তুলে নিয়েছেন ঝাঁটা। বিকাশ ভবনের সামনে যে শিক্ষকরা রাস্তায় ধর্না দিচ্ছেন, সেই রাস্তা পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়েছেন তারা। তাঁদের বক্তব্য, রাস্তাই এখন তাদের ঘরবাড়ি হয়ে গিয়েছে। তাই সেই রাস্তা পরিষ্কার রাখা তাদের কর্তব্য। রবিবার সকাল বেলায় দেখা গিয়েছে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা কেউ ঝাঁটা হাতে কিংবা কেউ নারকেল গাছের পাতা নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করছেন।