বুধবার সন্ধ্যার সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ঘুনির বাসিন্দাদের। ইকো পার্কের পিছনের জনবসতিপূর্ণ ঘুনি বসতিতে লাগা বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এবার কড়া পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতেই দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে ফোন করে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রায় ৩০০টি পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনিক তৎপরতা এখন তুঙ্গে। বৃহস্পতিবার সকালেই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টি এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
আগুনের লেলিহান শিখা নিমেষের মধ্যে রাজারহাটের জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই ঘিঞ্জি বসতিকে গ্রাস করে নেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁশের কাঠামো আর ত্রিপলের ছাউনিতে ঘেরা অন্তত ৭০-৮০টি ঝুপড়ি বাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। বাসিন্দাদের অধিকাংশ প্লাস্টিক ও কাগজ কুড়িয়ে জীবনধারণ করেন। সেই সব দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যেই একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এলাকা। দমকলের ১০টিরও বেশি ইঞ্জিন কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও মাঝে মাঝে ধোঁয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে।
এক রাতের আগুনে সব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে অথবা ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন কয়েকশো মানুষ। শুধু মাথার ছাদই নয়, সর্বস্বান্ত হওয়া পরিবারগুলোর বড় দুশ্চিন্তা এখন নথি নিয়ে। আগুনে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড থেকে শুরু করে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। রাজ্যজুড়ে এখন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ (এসআইআর) চলছে। এই পরিস্থিতিতে পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক দানা বাঁধছে বাসিন্দাদের মনে। তবে জেলা প্রশাসনের তরফে অভয় দেওয়া হয়েছে।
জানানো হয়েছে, পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে দ্রুত বিশেষ নির্দেশিকার মাধ্যমে নতুন নথি তৈরি করে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর এদিন ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক। তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা ও অস্থায়ী আশ্রয়ের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেন তিনি। ঠিক কী ভাবে এই আগুন লাগল, তার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হতে পারে। আপাতত শোক আর অনিশ্চয়তা সঙ্গী করে ঘুনির পোড়া জমিতে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছেন নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলো। সরকার তাঁদের পাশে থাকার পূর্ণ আশ্বাস দিলেও সব হারিয়ে রিক্ত পরিবারগুলোর চোখের জল বাঁধ মানছে না।














