এক দশক পেরিয়ে গেলেও কেন ভোট নেই হাওড়া পুরনিগমে? কেন বছরের পর বছর প্রশাসক দিয়ে চালানো হচ্ছে পুরসভা? শুক্রবার এই প্রশ্নে ফের সরব হল কলকাতা হাইকোর্ট। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি পার্থসারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আগামী ২৭ জানুয়ারি দুপুর দুটোয় এই মামলার বিস্তারিত শুনানি হবে। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে নির্বাচন থমকে থাকার কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
আদালত সূত্রে খবর, ২০১৩ সালের নভেম্বরে শেষবার ভোট হয়েছিল হাওড়া পুরনিগমে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব সামলেছিলেন চিকিৎসক রথীন চক্রবর্তী। নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও গত ১২ বছরে আর কোনও বোর্ড গঠন করা সম্ভব হয়নি। এই দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটাতে এবং অবিলম্বে নির্বাচনের দাবিতে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। মামলাকারীর আইনজীবীর অভিযোগ, রাজ্য সরকার ইচ্ছা করেই নির্বাচন করাচ্ছে না। তার বদলে নিজেদের মনোনীত প্রশাসক বসিয়ে পুরসভা চালানো হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ নাগরিকরা সঠিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে সওয়াল করেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়।
আইনি জটিলতার পাশাপাশি প্রশাসনিক দড়ি টানাটানিও এদিন প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী আদালতে স্পষ্ট জানান, ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। সরকার দিন ঘোষণা না করা পর্যন্ত কমিশনের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। ফলে বল এখন নবান্নের কোর্টেই ঠেলে দিয়েছে কমিশন। অন্যদিকে, বিরোধীদের অভিযোগ শাসকদল রাজনৈতিক স্বার্থে এই নির্বাচন আটকে রেখেছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ এক দশকের বেশি সময় ধরে কেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে রয়েছে, সেই ব্যাখ্যাই এখন আদালতের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী জানুয়ারির শুনানির দিকেই এখন তাকিয়ে সব পক্ষ। গত ২৪ নভেম্বর এই মামলাটি দ্রুত শোনার আবেদন করা হয়েছিল।
আদালত সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে মামলাটি শুনবে বলে জানিয়েছে। হাওড়াবাসীর নাগরিক পরিষেবা থেকে শুরু করে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন আইনি লড়াইয়ের মোড়কে বন্দি হয়ে রয়েছে। বছরের পর বছর ভোটহীন পুরনিগমে জনপ্রতিনিধির বদলে আমলাতান্ত্রিক শাসন চলায় জনমনেও ক্ষোভ বাড়ছে। ২৭ জানুয়ারি আদালত কী নির্দেশ দেয়, তার ওপরই নির্ভর করছে হাওড়া পুরসভার নির্বাচনের ভাগ্য।













